Bangla WritingsBangla Stories'margin of margin'Political Economy and ComputingGNU-Linux and GLTWorks of 'dd/ts'About 'dd/ts'BlogWrite Mails:dipankard at gmail dot comComposed by dd/ts, 2010. |
উলরিচ আর ক্রিবল-এর গল্পত্রিদিব সেনগুপ্তউলরিচ-এর আসল নাম উলরিচ নয়। সে একটা চুলের ক্লিপ, তার আসল নাম ছিল চুলরিচ। ক্রমে উলরিচ হয়ে গেছিল, শব্দের গোড়ায় সবাই “চ” বলতে পারেনা। আর ক্রিবল ছিল একটা বিড়াল – কাছাকাছি থাকত দুজনেই। উলরিচ ভারি চাইত ক্রিবল-এর জন্যে কিছু করতে। কিছু করতে পারলে ভালো লাগত তার, কিন্তু কী-ই বা করবে? মাঝে মাঝে ক্রিবলকে কিছু খেতে দেওয়ার জন্যে প্রাণ উতলা হত তার। ক্রিবলের কিন্তু খাবারের কোনো অভাব ছিলনা। তার পেটের গায়ে লটকানো ছিল তিন-তিনটে দেশ। চাইলেই সে হয়তো সেই তিনটে দেশের কোনো একটার দুর্গম জঙ্গল থেকে খেয়ে এল একটু জিরাফের ঘাড়ের পেশি,বা হয়তো কোনো একটা দেশের পাকা হলুদ ধানক্ষেতের হাওয়া কানে মাথায় একটু লাগিয়ে এলো। ক্রিবল-এর একবার শখ হল, বড় গাইয়ে হিশেবে পুরষ্কার পাওয়ার। কিন্তু তা কী করে হয়? ক্রিবল গাইতে পারত না, গাওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। ক্রিবলদের পাড়ায় সুর ছিলনা এমনিতেই, কোনো সাইকেলের বেল, গাড়ির হর্নও বাজতো না তাদের গলিতে। কিন্তু সেটাই বড় কথা না। গান গাইতে গেলে প্রথমে কথা বলতে হয়, তাদের অর্থে আর ছন্দে মিলিয়ে তবে কবিতা, তার পর, তাতে সুর লাগিয়ে তবে গান। শুধু ক্রিবল কেন, কোনো বিড়ালই কথা বলতে পারেনা, গান দূরের কথা। উলরিচ খুব চাইল ক্রিবল-এর শখ মেটাতে সে কিছু একটা করে। গভীর সমুদ্রের মহীসোপানে মিষ্টি জলের শামুক চাষের একটা ফার্ম করেছিল সে। গভীর গম্ভীর সমুদ্রের সবজেটে অন্ধকারে স্বপ্রভ ঝিলমিলে পাতাওলা গাছের আশ্রয়ে ভারি যত্নে, ভারি পরিশ্রমে ফার্মটা বানিয়েছিল উলরিচ। এত কাজের পরে বড় একটা সময়ও পেতো না সে। কোথায় যেন শুনেছিল,দু-বেলা পেট ভরে শামুক খেলে গানের গলা ভালো হতে বাধ্য। এমন হতেই পারে যে কথাটা কোথাও-ই শোনেনি সে, নিজের মাথাতেই বানিয়ে নিয়েছিল। কিছু একটা, ক্রিবলের জন্যে কিছু একটা করার বাসনাটা ছিলই। আর অত যত্নের পরিশ্রমের ঐ ফার্মের শামুক উজাড় করে দেওয়ার মত কষ্ট তার আর কী থেকে হবে? ক্রিবলের জন্যে সে কষ্ট পাচ্ছে, খুব কষ্ট, কষ্ট পেতে পেতে করছে – এই তৃপ্তিটাই হয়তো পেতে চাইছিল সে, নিজের অগোচরেই। গভীর সমুদ্রের সেই গোটা ফার্মের প্রতিটি মিষ্টি জলের শামুক একটা একটা করে জড় করল উলরিচ, নিয়ে গেল ক্রিবল-এর জন্যে। কিন্তু, এখানেই একটা গোলমাল ঘটে গেল। এতদিন সমুদ্রের গভীরে বেড়ে উঠে,শামুকগুলো বদলে গেছে, তারা আর মিষ্টি জলের শামুক নেই। ওদিকে,লবণ জলের শামুক তো তারা নয়ই। শামুককে তো কোনো একটা জায়গার শামুক হতেই হবে,মিষ্টি জলের হোক, বা লবণ জলের। তার মানে, তারা আর শামুকই নেই। শামুক নেই বলে তারা কৌটো, চুরুট কিম্বা আতাও হয়ে যায়নি, তারা এখন কিছুই নয়। ক্রিবল-এর খাওয়ার কথা ছিল শামুক, কিছুই-না খাওয়ার কথা ছিল না। তিন তিনটে দেশের ভার তার উপর, অমন আনতাবড়ি কাজ সে করে কী করে? বহু ভেবে, বহু অস্বস্তির পর, বহু সময় কাটিয়ে, সে না-খেয়েই চলে গেল। উলরিচ আর ক্রিবলের কোনোদিন আর দেখা হয়নি। |