Bangla WritingsBangla Stories'margin of margin'Political Economy and ComputingGNU-Linux and GLTWorks of 'dd/ts'About 'dd/ts'BlogWrite Mails:dipankard at gmail dot comComposed by dd/ts, 2010. |
তামাদি-র গল্পত্রিদিব সেনগুপ্তসব আলোই কি শুধু চোখে এসে ধাক্কা দেয়? পাড়ায় পাড়ায় বিয়েবাড়ি ভাড়া নিয়ে, ব্রহ্মাণ্ডের প্রথমতম বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর ঐ বিকট বেগুনির মত? সব আলো এরকম হয় না। অন্তত একসময় তো হত না। সে আমলের সেরকম কত আলোর কিম্বদন্তী এখনো পথে পথে ঘুরছে। তেমন কেউকেটা কেউ না হলেও, তামাদি ছিল এরকমই এক আলো। তামাদি এসে ধাক্কা মারত বুকের পাঁজরায়, কখনো কখনো তলপেটে। এই এলাকাটা তখন এখনকার মত ডেভেলপ করেনি। এখন তো এই রাস্তাটা গিয়ে পড়ে সারি সারি হ্যালোজেন লাগানো ফ্লাইওভারিত বড় রাস্তায়। তারপর তার থেকে শিরা উপশিরা কৈশিকনালীর মত অন্য আরো কত অগণ্য রাস্তা। যেমন হয় আর কি, রাস্তা থেকে রাস্তান্তর, রাস্তা কখনো শেষ হয় না। তখন এমনটা ছিল না। এই রাস্তাটাই ছিল একমাত্র অদ্বিতীয় নির্বিকল্প রাস্তা। এখানেই সব যাতায়াতের শুরু ও শেষ। এই রাস্তার পর আর কোনো ঐ রাস্তা ছিলই না মোটে। এই মোড়ের পর থেকেই, এখন যেখানে বড়রাস্তা, শুরু হত শেষহীন প্রান্তর, মেঘহীন আকাশের নিচে মাঝে মাঝে একাকী তালগাছ, আর তার গোড়ায় গোড়ায় শুকনো খোয়া আর মোরামের মধ্যে নাক দিয়ে জল সন্ধান করে বেড়ানো পথভোলা কুকুর। সেই অসীম প্রান্তরের ঠিক মাঝামাঝি একটা শুকনো মোটা শালকাঠের ডান্ডার মাথায় লাগানো ছিল তামাদিকে। কে লাগিয়েছিল, কেউ জানেনা। যুগের পর যুগ ধরে আলো দিয়ে গেছিল তামাদি। এই রাস্তার উপর থেকে, যে কোনো রাত্তিরে, ঝড়ের বা বসন্তপূর্ণিমার, তামাদিকে দেখা যেত। লোকে মনে বল পেত। পথ ভুলে গেলে, দিশা ঠিক করত তামাদিকে দেখে। বহু বছর ধরে একই ভাবে একই জায়গায়, অবিকল একই রকমে। দীর্ঘ একটা যুগের কত অজস্র শেষহীন ঘটনার সাক্ষী সে। তার কিছু ঘটনা এমনকি তামাদি নিজেও ঘটিয়েছে। ওপাড়ার জোছন মিস্তিরির বড় মেয়েকে বর্গীরা তুলে নিয়ে গেছিল, রেপ করবে বলে। সেদিনের ঘটনাটা খুব বিখ্যাত হয়েছিল এর পর পর। বর্গীদের সর্দার, তার সমস্ত প্রক্রিয়ার পর, মেয়েটির জামাকাপড় তো খুলেই ছিল, নিজেরটাও খুলেছিল। ঠিক তখনি তার খোলা তলপেটে আঘাত করে তামাদি,সেই মুহূর্তেই মারা যায় সে। আর কারোর সাধ্য ছিলনা মেয়েকে সেদিন বর্গীর হাত থেকে উদ্ধার করার। তারপর একসময়,যথারীতি,সবাই সবকিছু ভুলে যায়। তামার তার, পাত, আর ছোটো ছোটো রড দিয়ে বানানো, ছোটো ছোটো পাথরের গুলির ঝালর বসানো, পৌরাণিক লন তামাদিকে আর কেউ মনে রাখলো না। এলাকা বদলে গেল, নতুন রাস্তা, নতুন বাড়ি, পর্চার দলিলের নম্বর মিলিয়ে ছোটো ছোটো চৌকো চৌকো মাঠ, এইসবে ভরে গেল চারদিক। সেই না-ঘটা ধর্ষণের রাত্তিরে, শেষবার সূর্যকে পাক খেয়ে সৌরজগত থেকে চিরবিদায় নিচ্ছিল এক ধূমকেতু, তার পর থেকে শেষহীন অধিবৃত্তে অনন্তকাল একই গতিতে ব্রহ্মাণ্ডের সীমার দিকে ধেয়ে চলেছে সে। সেই রাতের সেই ঘটনার-আলোর-আবেগের ছায়া পড়েছিল ধূমকেতুর পাথরে। সেটা এখনো সেখানে ধরা রয়েছে। সেই ছবি এখনো জ্যান্ত। কিন্তু তামাদি কোনোদিন জানতে পারেনি, শুধু সে কেন, এই পৃথিবীর কেউই কোনোদিন জানতে পারবে না আর, কারণ, একমুখী ধূমকেতু আর তো কোনোদিনই ফিরে আসবে না এই সৌরজগতে, জানতে পারলে হয়ত আরাম হত তার, হয়ত ভালো লাগত, যে, তাকেও কেউ মনে রেখেছে। |