Bangla WritingsBangla Stories'margin of margin'Political Economy and ComputingGNU-Linux and GLTWorks of 'dd/ts'About 'dd/ts'BlogWrite Mails:dipankard at gmail dot comComposed by dd/ts, 2010. |
ওফেলিয়ার অন্য প্রেমিকের গল্পত্রিদিব সেনগুপ্তওফেলিয়া জলে ভাসছিল, সারা রাত ধরে, জলের ছোটো ছোটো হিল্লোল তাকে চোখের পাতায় করে দুলিয়েছে। ছোটো ছোটো চৌকো চৌকো মাছের আঁশের মত প্রেমিক-নরম হিল্লোল, শুধু যত্ন আর আদর, আর টের-না-পাওয়ার মত হালকা করে দোলা দিয়ে চলা, যেমনটা ঘটে বরং চারদিকে গাছের ছায়ায় আর নিরাপত্তায় ঘেরা পুষ্করিণীতে, নদীর জলে এমনটা কমই হয়, ওফেলিয়ার ভেসে যাওয়ার রাত্তিরে হয়েছিল, ওফেলিয়া ভেসে গেছিল স্রোতের টানে নয়, ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কিছু তার করার ছিল না বলে। সারা রাত ধরে প্রেমিক আদরের কোমল নিরাপত্তার দোলায় দুলল ওফেলিয়া, এত নির্ভার কখনো হয়েছে কি এর আগে? সকালে ভোরের আলো এসে তাকে দেখল, তারপর আর সবাই, শুধু এত সমাগমেও ওফেলিয়া রইল উদাসীন নিরাগ্রহ।
এখানে ওফেলিয়ার প্রথম প্রেমের আখ্যান, হ্যামলেটের আখ্যান, শেষ,আর অন্য সব আখ্যানের বিস্মৃতি। একটা আখ্যান একটা আখ্যান হয় অন্য অন্য আখ্যানদের ভুলে গিয়ে। সত্যিই কি এখানেই শেষ হয়েছিল ওফেলিয়ার আখ্যান? নাকি ঐ ছবিটা? ওফেলিয়ার মুখ, চারদিকে ছড়ানো ছোটো ছোটো জলের ঢেউয়ের জরি আর ভাসতে থাকা প্রচুর ফুলের চাঁদমালা? কার ছবি, কোথায় দেখেছিলাম, উদ্বেগহীন শান্ত মৃত ওফেলিয়া। এটা যখনকার গল্প তখন মানুষকে নিঃসঙ্গ হতে হত না। খুব এলোমেলো লাগলে সে জলের কাছে যেত,পাড়ে গিয়ে বসলেই হত, রাশি রাশি তেচোখো মাছ চলে আসত তার কাছে, তাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছোটাছুটি করত, নাচ দেখাত তাকে, বিষণ্ণ হতে দিত না কিছুতেই। আর জলে নামলে তো কথাই নেই। জলে হালকা হয়ে যাওয়া তার হাত পা শরীর নিয়ে খেলা করত তারা, উঠতো আর নামতো তখন ঢেউ হয়ে যাওয়া তার চুলের ওঠানামায়। নিম্নগাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গের নদী নালা খাল বিল জলা, এমনকি জল-জমা ধানক্ষেত অব্দি ভরে থাকত তেচোখো মাছে। এমনকি খুব গভীর সর্বব্যাপী তুমুল বৃষ্টির ভিতর, জানলার কাঁচের সার্শি খুলে হাত বাড়িয়ে রাখলেও হাতের কোষে এসে জমত তেচোখো মাছের ঝাঁক। ঠিক যেমন তারা ভিড় করেছিল ওফেলিয়ার চারদিকে। মানুষ তো খুব চাইলেও কাউকে চারদিক দিয়ে ঘিরতে পারে না, যতই চাক। ভূমির মাত্রা তার কাছে খোলা থাকে মাত্র দুটো, দৈর্ঘ আর প্রস্থ, সামনে-পিছনে বা ডান-বাঁ, এই দুটো দিক দিয়েই মানুষ পারে কেবল ঘিরতে। কিন্তু মাছেরা তো উপর-নিচ দিয়েও ঘিরতে পারে। এমন ঘিরে থাকা আর আলিঙ্গন এর আগে কেউ দিতে পারেনি ওফেলিয়াকে। অনেক অনেক অজস্র মাছ,তাদের মধ্যে একজনের নাম সদানন্দ। ওফেলিয়ার চোখ এখন নিষ্পলক, বুঁজে যাওয়ার কোনো ভয়ই নেই আর কোনোদিন, আর সদানন্দের নিজের চোখে তো কোনো পলকই নেই, কোনো মাছেরই থাকে না, সেই নির্নিমেষ অতলান্ত চোখের মায়াবি স্বপ্নের আয়নায়া, এই প্রথম আবিষ্কার করল সদানন্দ, সে নিজে কত সুদর্শন। সে এখন ঘোরে ফেরে আর ফিরে ফিরে আসে, বার বার,অকারণে, এর চেয়ে বড় কারণ আর কে কবে পেয়েছে কোথায়। ফিরে আসে ওফেলিয়ার, তার একান্ত নিজের ওফেলিয়ার কাছে। আর ওফেলিয়া এখন প্রাকৃতিক, ভারি প্রাকৃতিক, আদিম ঈশ্বরীর মত। ওফেলিয়াই প্রকৃতি, কারণস্বরূপিনী, তার চারদিক ঘিরে ভ্রাম্যমান থাকে সদানন্দ, সদা আনন্দে থাকে সে, তার চূড়ান্ত আরব্ধ পেয়ে গেছে সে, আর কোথাও যাওয়ার নেই, আর কিছু খোঁজার নেই তার। অনেক অনেক অগণ্য তেচোখো মাছের ঝাঁকের একজন মাত্র ছিল সে। এখন সে জানে, সে কে, নিজের, নিজের বেঁচে থাকার, নিজের অস্তিত্ত্বের কারণ খুঁজে পেয়েছে সে, খুঁজে পেয়েছে নিজের নামের সত্যিকারের অর্থ। নিজের এই থৈ থৈ রূপের অর্থও খুঁজে পেয়েছে সদানন্দ -- ওফেলিয়ার চোখে নিজের সব হারিয়ে নিজেকে আর একবার ফিরে পাবে বলে। কিন্তু, তাদের ঝাঁকে, তারা সবাই-ই তো ছিল প্রায় হুবহু একই রকম, তাহলে একা তার বেলাতেই এটা ঘটল কেন, মাঝে মাঝে ভাবে সদানন্দ। আসলে, কপালে তিন নম্বর চোখ তো থাকে সবারই, কজনের সেটা সত্যিই তৃতীয় নয়ন হয়ে ওঠে? আর একটা কথাও মনে হয় তার, সেটা সে একদম ভাবতে চায় না, প্রেমিকরা তো হিংসুটে হয়ই -- আর কেউও যে তার ওফেলিয়ার প্রেমে পড়েনি, এটা সে জানল কেমন করে? থাক ওসব কথা, সদানন্দ এসব খারাপ কথা ভাবতে চায় না একদম। সদানন্দের দিনরাত্রিদিন এখন বয়ে যায় প্রেমে, অহর্নিশ প্রেমিকার শরীরেই সময় কাটে তার। ওফেলিয়ার শরীরেই বেঁচে থাকে সে। তার শরীর মন, সবকিছুরই রসদ আসে ওফেলিয়ার থেকে। সে নিজে তো ছেদহীন ভাবে বকেই চলে, মাঝে মাঝে ওফেলিয়াও কথা বলে। কি অদ্ভুত প্রাকৃতিক রকমে কথা বলতে পারে ওফেলিয়া, ঢেউয়ের দোলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে। শুধু সদানন্দ না, বদলে চলেছে ওফেলিয়া নিজেও, আর ওফেলিয়ার গভীর গভীর গভীরতম অভ্যন্তর অব্দি চিনে চলেছে সদানন্দ, প্রেমিকের খোঁজার কি কোনো বিরাম থাকে? |