Bangla WritingsBangla Stories'margin of margin'Political Economy and ComputingGNU-Linux and GLTWorks of 'dd/ts'About 'dd/ts'BlogWrite Mails:dipankard at gmail dot comComposed by dd/ts, 2010. |
ক্রিবলের গল্পত্রিদিব সেনগুপ্তক্রিবল খুব অসুবিধেয় ছিল, তাই, একটা সমাধানে তাকে আসতেই হল। এমনিতেই ঝঞ্ঝাটের তার শেষ ছিল না। দেশ তিনটেকে ভুলে থাকার, এড়ানোর, কোনো উপায় ছিল না তার, এড়াবে কী করে, তার পেটের সঙ্গে সেঁটে দেওয়া আছে তাদের। প্রত্যেক মুহূর্তে নতুন কিছু না কিছু ঘটে চলেছে। সমাজ সভ্যতা সংসার সব কিছুই বদলে যাচ্ছে তাদের। কিছু না কিছু গরমিল গন্ডগোল সেখানে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেটা বড় কথা না। ক্রিবলের বয়স যায়নি এখনো, দেহের নিজের স্বতন্ত্র ভূগোল ইতিহাস। সময়ের গতি মেনে ঋতুচক্র মেনে শরীরের দাবি জাগে। বছরে দুবার বাচ্চা হয় তার, বাচ্চাদের নিয়ে ঝামেলায় পড়ছিল ক্রিবল। এখানে সেখানে চলে যায়, লোকে ধরে মারে, লরির তলাতেও মারা গেছে এক আধটা। বেঁচে থাকলেও ঝামেলা কিছু কম না। ঐ তিনটে দেশ ভর্তি অজস্র জঙ্গল, পাহাড়, লোকালয় -- তার কোথাও মুখ মারলেই হল। আপাতত হয়ত একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা, কিন্তু তার থেকে কত হাজার বছর যে পিছিয়ে যেতে পারে, আমূল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা অভিযোজন বিবর্তন সবকিছু। তা হলেই বা কী হয়, মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ক্রিবল-এর। কিন্তু মন খুঁতখুঁত করাটাও আটকাতে পারে না, এত কিছু ঘটে যাবে তার একটু অসাবধানতায়? এর মধ্যে পরপর দু-দুটো বাচ্চা খেয়ে ফেলল হুলো বিড়াল। কী যে ঘটল তার, নিজেই বুঝে উঠতে পারে না ক্রিবল। কী ভয়ঙ্কর, কী যে করে বেড়িয়েছে, সমস্ত সোফা থেকে, চেয়ার আলমারি মিটসেফের পিছন থেকে সে যেন তুলোর বলের মত তুলতুলে বাচ্চাদুটোর গন্ধ পাচ্ছে, মুখ ঢুকিয়ে বেড়াচ্ছে সমস্ত জায়গায়, যেন মুখে করে ঘেঁটি কামড়ে বার করে আনবে তাদের, চোখ না-ফোঁটা থ্যাবড়া থ্যাবড়া মুখে কুঁই কুঁই করতে করতে সে দুটূ এক্ষুনি দুধ খুঁজতে শুরু করবে, এবং খুব বিরক্ত মুখে ক্রিবল-ও চাটতে থাকবে তাদের। হুলোটাকে মাঝে দেখল একদিন, ক্রিবল-এর রাগ হচ্ছিল না, কেমন বীভত্স লাগছিল। পায়ের নখগুলো থাবার মাংসের মধ্যে তিরতির করে কাঁপছিল। মাথাটা শূন্য লাগছিল তার, কী দেখছে কেন দেখছে সেটাই মনে পড়াতে হচ্ছিল,অথচ হুলোটা তাকে চিনতেও পারল না। তাকিয়ে দেখলও না। আসলে কোনটা তার কাছে বেশি জরুরি ছিল, হুলোর তাকে দেখাটা চিনতে পারাটা? হুলোটা চলে যাওয়ার পরই নিজের ভিতর সিদ্ধান্তটা জেগে উঠতে দেখল ক্রিবল, তারপর যত দিন গেছে, প্রত্যেকটা দিন আরো আরো বেশি করে বুঝতে পেরেছে, এটাই একমাত্র সিদ্ধান্ত যা সে নিতে পারত, যা তার নেওয়ার ছিল। এই সিদ্ধান্ত এবং প্রক্রিয়ার ফলে, তার কোনো সন্তানকে আর কখনো কোনো ভাবে হারানোর ভয় নেই ক্রিবলের। সেটা আর সম্ভবই নয়, এমনকি ক্রিবল নিজে চাইলেও, যতক্ষণ না সে নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। শরীর সংলগ্ন দেশগুলোয় আয়নার কোনো কমতি নেই, প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক। দুটো দেশে সভ্যতা চলছে, একটায় শিল্পবিপ্লবও ঘটে গেছে, ঘরে ঘরে দোকানে দোকানে আয়না, ঠিক তার চারপাশের বাড়িগুলোর মতই। সভ্যতার সঙ্গে প্রকৌশলের সঙ্গে তাল রেখে, আয়নার সংখ্যা তো বাড়তেই থাকে। তার যে কোনো একটা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ক্রিবল, আর নিখুঁত চিনতে পারে, নিজের সন্তান চিনতে মায়ের কখনো ভুল হয় -- এই তো তিন প্রসুতি আগের সেই দুষ্টু সাদাকালো ছোপওলাটার উচ্ছ্বলতা, ঐ তো, ঠিক আগের প্রসূতিতে ঢলঢলে দুধসাদা ছানাটার লাবণ্য, তারা সবাই আছে, প্রত্যেকেই। আর কেউ কখনো হারিয়ে যাবে না। ক্রিবল-এর গোটা অস্তিত্ত্ব গোটা বাস্তবতা জুড়ে তার সমস্ত সন্তানেরা খেলা করে বেড়ায়, তার সমস্ত বিগত সন্তানেরা, তার সমস্ত সম্ভাব্য সন্তানদের সঙ্গে, একত্রে, সবাই তারা রয়েছে ক্রিবলের গোটা দেহমন জুড়ে। ক্রিবল নিজে ক্রমে বেড়েই চলেছে। তার সমস্ত সন্তান, তাদের প্রতিটি কিছু এখন তার ভিতরেই রয়ে যায়। জন্মানো মাত্র বাচ্চাদের সে নিজেই খেয়ে ফেলে, তাই হুলোদেরও আর ভয় পেতে হয় না তাকে। |