Bangla Writings

Bangla Stories


'margin of margin'

Political Economy and Computing

GNU-Linux and GLT


Works of 'dd/ts'

About 'dd/ts'

Blog


Write Mails:

dipankard at gmail dot com


Composed by dd/ts, 2010.

নভোযাত্রীর গল্প

ত্রিদিব সেনগুপ্ত

সৌরজগতের চূড়ান্ত প্রত্যন্তে, এই ধূসর জগতে বস্তুর উপস্থিতি এখানে ক্ষীণ। তার শেষ ল্যান্ডিং, মৃত নীহারিকার এই শীতল প্রস্তরস্তূপ এখন অনন্তকাল একই গতিতে একই রেখায় একই দিকে ধাবমান থাকবে, যদি না বৃহত্তর বা শক্তিশালীতর কোনো নভোবস্তুর গতিপথে এসে পড়ে, যদি না সে একে গ্রাস করে। এখান থেকে নিকটতম নভোবস্তুটির দূরত্বটাও এত বেশি যে তার যাত্রার শুরুতে সম্পূর্ণ জ্বালানি নিয়েও সেটা হত স্বপ্নের অগোচর, আর এখন, এই সুদীর্ঘ পনেরো বছরের যাত্রার শেষে যানের রসদ এসে ঠেকেছে তলানিতে। আবার তার নিজের জন্যে এটা পর্যাপ্তের চেয়েও বেশি। তার জীবন কতটা আর বাকি আছে, কত হবে? তিন চার পাঁচ দশক খুব অবিশ্বাস্য মারাত্মক বেশি হলে, তার জন্যে তার রসদ পর্যাপ্তের চেয়েও বেশি। একটা মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য বা তাপ তৈরিতে কতটুকু জ্বালানি লাগে?

তৃতীয় গ্রহের একমাত্র উপগ্রহের নতুন উপনিবেশে উদ্বোধন হল ব্রহ্মাণ্ডের অলৌকিকতম পুতুল, বিবর্তনের ইতিহাসে একটা বিরাট পদক্ষেপ। তখন খোঁজ পড়ল স্বেচ্ছাসেবক সন্ধানীদের, যাদের কারোর কোনো পিছুটান নেই। যাত্রা করার আগে থেকেই তারা জানত, তাদের আর কোনোদিন ঘরে ফেরা হবে না। আর যদি সে ফিরে যেতে পারত, কোথায় যেত? কোন পৃথিবীতে? তার নিজের ক্যালেন্ডারে কেটেছে মাত্র দেড় দশক, অথচ, তার গ্রহে কেটে গেছে কয়েকটা শতাব্দী। তারা যাত্রা করেছিল প্রায় আলোর গতিতে, যাতে সৌরজগতের প্রত্যন্ত থেকে সংগ্রহ করা যায় যথেষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য। জাতিসত্তা নিয়ে গৃহযুদ্ধ ততদিনে শুরু হয়ে গেছে, সৌরজগতে সভ্যতার শুরু কোন গ্রহ থেকে, তৃতীয় না পঞ্চম। যে লড়াইয়ের নিরসন করতে পারে একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব। একটা প্রশ্ন ছিল,সংগৃহীত তথ্য ফেরত আসবে কী করে? তখন ঠিক হয়, তার জন্যে, ভবিষ্যতে, রওনা দেবে আর এক গুচ্ছ যান, উন্নততর প্রকৌশলের, যারা ফিরেও আসতে পারবে। আসলে সৌরকর্তৃপক্ষের তখন প্রমাণ করা দরকার ছিল, গৃহযুদ্ধের সমাধানে কিছু একটা করা হচ্ছে।

সে যখন যাত্রা শুরু করে, তখন যারা ছিল তার গ্রহে, বহু বছর হল তাদের বহু জেনারেশন লুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের, প্রত্নসন্ধানীদের যাত্রার কাহিনী, সেটা কোনো একটা সময়ের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। সেই ইতিহাসও কি বেঁচে আছে আর?

নভোচর প্রত্নসন্ধানী জানে, তার কিছু করার নেই, না-করার নেই। কিছুতেই কিছু এসে যাবে না, না তার নিজের, না অন্য কারোর। সে তাই মৃত নীহারিকার পাথরে লিপিবদ্ধ ছবি সংগ্রহ করে যায়। সংগ্রহ করাকালীন মাঝে মাঝে নিজেও সে উল্টে পাল্টে দেখার চেষ্টা করে, বোঝার চেষ্টা করে, অনাদি অনন্ত অতীতের সেই চিত্রাবলী। এতই অজানা সে অতীত, এত অদ্ভুত, কখনো কোনো বিদ্রোহী লণ্ঠনের, কখনো কোনো কথা বলা পাখির, উপকথা আখ্যান আর ইতিহাস মিলে মিশে যায়। মৃত নীহারিকার পাথর থেকে ছবি কুড়িয়েই চলে নভোচর প্রত্নতাত্ত্বিক, আর কিছু করার নেই তার।